সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস
১৯১০ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে নাগরীতে পুর্তুগীজ পুরোহিতদের পৃষ্টপোষকতায় এবং তৎকালীন জিলা বোর্ডের সামান্য অনুদানে একটি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (Lower Primary School) চালু হয় । অর্থাৎ প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেনি প্রর্যন্ত ছিল। তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু অনরুপ চন্দ্র রায় । তিনি এফ.এ পাশ এবং ইংলিশ টিচারশীপ উত্তীর্ণ ছিলেন।
যেহেতু একমাত্র কালীগঞ্জ ছাড়া এর আশেপাশে ১০/১৫ মাইলের মধ্যে কোন বিদ্যালয় ছিলোনা, সেহেতু স্থানীয় চার্চ কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলের জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর একে নিম্ন মাধ্যমিক ইংরেজী বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন ।
১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে কোন ছাত্র ছিলনা, ৫ম শেণিতে ৫ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৭ জন, ৩য় শেণিতে ১৩ জন, ২য় শ্রেণিতে ৬ জন মোট =৩১ জন । ঐ বছর প্রথম শ্রেণিতে ৫২ জন ছাত্র ভর্তি করানো হয় । যার মধ্যে স্থানীয় খ্রীষ্টান ছাত্র ছিল ৩১ জন, হিন্দু ছাত্র ছিল ৩৩ জন এবং মুসলমান ছাত্র ছিল ১৯ জন । তৎকালীন St.Nicholas Middle English School এর পরিচালক কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন রেভাঃ ফাদার জে, জারকাতো (J, Jorqato)। ঐ সময় বিভাগীয় পরিদর্শক সাহেব মন্তব্য করেন যে, জারকাতো সাহেব হলেন অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রাণ এবং আত্মা। তার আপ্রাণ চেষ্টার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্টানটির অবস্থান একটি পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলের উন্নয়নের পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসেন । সে সময় এ অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা মোটেই ভালো ছিলনা । বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া কোন যোগাযোগ ছিলনা । তবু বিদ্যালয়টির পাকা দালান ছিল এবং পয়ঃপ্রণালীর সুবন্দোবস্ত ছিলো।
১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে ছাত্র বেতন হার ছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১ টাকা, ৫ম শ্রেণি ১৪ আনা, ৪র্থ শ্রেণি ১২ আনা, ৩য় শ্রেণি ১২ আনা, ২য় শ্রেণি ৮ আনা, ১ম শ্রেণি ৪ আনা । কিন্তু সর্বমোট বার্ষিক গড় মাসিক আদায় হতো ২০ টাকা মাত্র; অথচ মাসিক ব্যয় হতো ৮০ টাকা। বাকী টাকা মিশন কর্তৃপক্ষ বহন করতো। এতে অত্র এলাকার দৈন্যদশা ফুটে উঠে। ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে ১ম শ্রেণিতে ৬১ জন ছাত্র ছিল, তার মধ্যে ১ জন ফ্রি এবং বাকী ৬০ জনই ছিল হাফ ফ্রি। তৎকালীন বিভাগীয় পরিদর্শক আব্দুল গনি মন্তব্য করেন যে, শিক্ষার মূল্য সম্বন্ধে অনিহার কারনেই বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম এবং বেতন পরিশোধের অনিহা দেখা যায় । বিদ্যালয়টি প্রায় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে । তিনি আরো বলেন যে, “If the local people are adverse to pay anything for their sons education, I believe it is almost useless to give any English education to all.”
যদিও দেখা যায় ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্র ছিলো মাত্র ৩ জন তথাপি এ অল্প সংখ্যক ছাত্রের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মিশন কর্তৃপক্ষ Rev. Father B. D’Cunha ২রা জানুয়ারী ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নিত করেন এবং বাবু ধীরেন্দ্র নাথ দে বি.এ-কে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেন । এরপর বিদ্যালয়টির ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং সরকারী স্বীকৃত ও নির্দেশিত নিয়মে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় । এতে রেভা: ফাদার বি, ডি কুনহা (ভিকার/প্রশাসক, পর্তুগীজ মিশন ) সভাপতি নির্বাচিত হন । ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে । তখন বিদ্যালয়ের ক্লাশ বসতো শীতের দিন ১১.০০-৩.০০ পর্যন্ত এবং গরমের দিনে ভোর ৬.০০-১০.৩০ পর্যন্ত।
১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে সর্বপ্রথম সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দ মেট্টিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন । পরীক্ষার কেন্দ্রের নাম ছিলো নারায়ণগঞ্জ । ১৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিল এর মধ্য ৪ জন প্রথম বিভাগে এবং ৬ জন দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে । ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে পরীক্ষা দেয় ১৬ জন । তাদের মধ্যে প্রথম বিভাগে পাশ করে ৭ জন এবং দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে ৬ জন । প্রথম থেকেই এ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষা এবং ছাত্রদের মধ্যে সার্বক্ষণিক ইংরেজীতে কথা বলার উপর জোর দেওয়া হয় । দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত দেখা যায় অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য “দৈনিক আনন্দ বাজার, Hindustan Standerd” প্রত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সেরা শিক্ষক এনে বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মান উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন পর্তুগীজ মিশন কর্তৃপক্ষ । তারা তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার ফসল রেখে গেছেন সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এর ফলে বর্তমানে প্রতি বৎসর প্রায় শতাধিক ছাত্র কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাচ্ছে। এখানে অতীত দিনের মতো বর্তমানেও শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিতর্ক, স্কাউটিংসহ নানাবিধ শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এখন আমাদের উচিত এ সকল সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তোলা।